জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া : রাঙ্গুনিয়ায় থামানো যাচ্ছে না থামাকের আগ্রাসন। সবজি চাষাবাদের পাশাপাষি কোথাও কোথাও সবজি ক্ষেত দখল করেই চাষ হচ্ছে তামাক। ফলে নষ্ট হচ্ছে কৃষি জমির উর্বরা শক্তি। অপরদিকে তামাক চুল্লীর জ্বালানির জোগান দিতে পুড়ানো হচ্ছে বনাঞ্চলের কাঠ। ফলে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তামাক শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি। আগে যে জমিতে শাক-সবজি, আলু, ধান সহ নানা কৃষিজাত পণ্য চাষাবাদ হতো এখন তাতে দখলে নিয়েছে তামাক চাষ। মুনাফার লোভে ক্ষতিকর জেনেও কৃষক তামাক চাষে জড়িয়ে পড়ছে। আর তামাক চাষের কারণে কৃষি পণ্য উৎপাদন কমেছে। আর তামাক ক্ষেতে অতি মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে আশপাশের কৃষি ক্ষেতে ফলন ভালো হচ্ছেনা। এতে জমির উর্বরা শক্তি হ্রাস এবং পরিবেশের ক্ষতি ছাড়াও নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।
জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ার কর্ণফুলী, ইছামতি, নাফিতপুকুরিয়া নদীর অববাহিকার সমতল ভূমির উর্বর জমিতে একসময় ব্যাপক শাক-সবজি, আলু, ধান, বাদাম সহ প্রভৃতি ফসল চাষ হত। বেশ কয়েক বছর ধরে তামাক কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন লোভনীয় প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে এসব উর্বর জমিতেই তামাক চাষাবাদ করছে কৃষক। মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনে দেখা যায়, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রাঙ্গুনিয়া পৌরএলাকার ইছাখালী, দক্ষিণ ঘাটচেক, মজুমদারখীল, দৈবকানন্দন, কুলকুরমাই, উত্তর ঘাটচেক, পারুয়া ইউনিয়নের গোয়াছপাড়া, পদুয়ার দুধপুকুরিয়া, নাপিত পুকুরিয়া, কমলাছড়ি, রাজানগর ইউনিয়নের বগাবিলিসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রাণঘাতী এই বিষবৃক্ষের চাষ করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, কৃষি বিভাগের তদারকির অভাব, সার সংকট আর উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় বহুজাতিক ও দেশীয় টোবাকো কোম্পানিগুলোর সহযোগিতায় কৃষক ও চাষীরা সম্পৃক্ত হচ্ছেন তামাক উৎপাদনে।
এদিকে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলার কিছু আবাদী জমিতে এবং কোথাও কোথাও সবজির পাশাপাশি চাষ করা হয়েছে তামাক। তবে গত বছরের তুলনায় এবার তামাক চাষ কিছুটা কমেছে। শুধু তাই নয়; উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চুল্লিতে তামাক ধুমায়িত করতে প্রতিদিনই কয়েকশত টন গাছ ও কাঠ পোড়ানো হয়। তাই উজাড় হয়ে যাচ্ছে গাছপালা।
অন্যদিকে বিশেষত নারী ও শিশুরাই তামাক চাষবাস ও প্রক্রিয়াজাতের সাথে বেশি জড়িত। এ কারণে তারা যক্ষ্মা, হাঁপানি, ফুসফুসের ক্যান্সার, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেক কৃষক জানান, তারা নিয়মিতই ভেনটোলিন ট্যাবলেট ব্যবহার করছেন। ইছাখালীর তামাক শ্রমিক বেবী রানী দে জানান, ‘পূর্বে শাক সবজির ক্ষেতে দিন মজুরির কাজ করতাম। কিন্তু তামাক চাষ শুরু হওয়ার পর থেকে সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত তামাক ক্ষেতে দৈনিক ১৬০ টাকা বেতনে দিনমজুরের কাজ করছি’। ঘাটচেকের তামাক ক্ষেতে কাজ করা কয়েকজন শ্রমিক জানায়, তামাক চাষ ক্ষতিকারক জেনেও জীবিকার তাগিদে করতে হয়। ইছাখালী চরাঞ্চলের তামাকচাষী মো. কাদের বলেন, তামাক কোম্পানি থেকে ৫০ হাজার টাকা বিনা সূদে লোন পেয়েছি, সাথে তামাকের বীজ দেয়া হয়েছে। আর তামাক চাষে লাভও বেশি তাই ক্ষতির ব্যাপারে জেনেও এই চাষ করেছি।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা করিমা আক্তার জানান, তামাক চাষ কৃষক ও কৃষি জমি দুই ক্ষেত্রেই ক্ষতিকারক। আমরা কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করছি। খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলায় ধান, শাকসবজি উৎপাদনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করণ ও নানা পরামর্শ দিচ্ছি।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম মজুমদার জানান, তামাক চাষ বন্ধে আইনগত জটিলতার কারণে সরাসরি আমরা কিছু করতে পারি না। তবে তামাক পোড়ানোর জন্য চুল্লিতে যে অবৈধভাবে কাঠ পোড়ানো হয় সেখানে আমরা আইনের ব্যবহার করবো।